একটি অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফ
শামস সাইদ
সাত মাস এগারো দিন পরে বাড়িতে ফিরেছে রিফাত। সাথে মা। বাবা এখনও ফেরেনি। দাদুর খবর জানতে পারেনি। বাড়ির সামনে এসে থমকে দাঁড়াল সে। মায়ের চোখ মুখ শুকিয়ে কাট। ঘরের দরজা খোলা। জানালা ভাঙা। ঘরের ভেতর ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। উঠানে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন মা।
রিফাতের বাবা মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। তার কিছু দিন পরে এক গভীর রাতে দাদুকে ধরে নিয়ে গেল পাকিস্তানী বাহিনী। পরদিন রিফাতকে নিয়ে মা চলে গেলেন বাবার বাড়ি। সেখানেও দিন রাত ভয় আর উৎকন্ঠা জাড়িয়েছিল তাদের। রাতে কেউ বাড়িতে ঘুমায়নি। আশ্রয় নিত বাড়ির পেছনের বাগানে। কেউ গাছে উঠে বসে থাকত। ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকত। রিফাতের এসব ভালো লাগত। কেমন একটা অ্যডভেঞ্চার ভাব আছে। সঙ্গে থাকত মামাত ভাই শাহিন। সন্ধ্যা নামলেই সবার মুখ অন্যরকম হয়ে যেত। ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে যেত বাগানে। মা নানী সবাই চলে আসত। হোগলা বিছিয়ে বসে থাকত। গল্প করত। শাহিনকে নিয়ে রিফাত চলে যেত বাগানের আরো ভেতরে। ঝিঁঝি পোকা ধরত। ফিঁস ফিঁস করে কথা বলত। কেউ যেন না শোনে। নানি টুক টুক করে বাঁশের কৌটায় পান কুটত। নানীকে ভয় দেখানো জন্য দূরে গিয়ে শিশ দিত রিফাত। আবার ঢিল ছুড়ে মারত। সবাই ভয়ে জমে খিড়। হাসতে হাসতে সামনে এসে দাঁড়াত রিফাত।
কখনো আবার ছুটে এসে বসে পড়ত নানীর সামনে। গল্প শুনবে। দেশে যুদ্ধ হচ্ছে কেন? এভাবে কতদিন পালিয়ে থাকব? বাবা কবে বাড়ি ফিরবে? দাদুর খবর নাই। কোথায় গেছে? কারা নিয়ে গেছে?। নানি বলেন সেই গল্প। কেন যুদ্ধ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে থামিয়ে দিল রিফাত। কে এই বঙ্গবন্ধু? সবাই কেন তার কথা যুদ্ধে গেল?
মা বললেন, তুই বঙ্গবন্ধুকে চিনিস না?
কীভাবে চিনব? আমি তো কখনো দেখিনি। কথাও হয়নি তার সাথে।
কথা না হলেও দেখেছিস তুই।
কোথায় দেখলাম? আমি তো কখনো বঙ্গবন্ধুর কাছে যাইনি।
আমাদের বাড়িতে দেখেছিস। তোর দাদুর সাথে। সামনের ঘরে ঝুলান। দেখিস নাই ওই ছবিটা? উনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। মোটা ফ্রেমে কালো চশমা পরা।
রিফাত কিছুক্ষণ ভাবে। খুব চেষ্টা করে মনে করতে। ওই ছবিটা কল্পনায় আনতে। দাদুর ছবিটাই ভেসে ওঠে। পাশেরটা দেখে না। তখন কেমন ঘোলাটে হয়ে যায় চোখ। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও পারল না। ওভাবে কখনও খেয়াল করেনি। দেখার কৌতূহল তৈরি হয়নি। এখন কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বাড়ি ফিরেই দেখবে ছবিটা। বঙ্গবন্ধু তাদের ঘরে আছে। সে দেখে নাই। এটা অন্যায়। তারপর অনেকদিন কেটে গেছে। যুদ্ধ আর থামছে না। কত ঘটনা ঘটে গেছে। কত মানুষ ধরে নিয়ে গেছে। মরা মানুষের লাশ ভাসছে খালে। এসব দেখে হাঁপিয়ে উঠেছে রিফাত। ভয়ে জড়োসরো হয়ে গেছে। ভুলে গেছে হাসতে। হঠাৎ একদিন সব ভয় উৎকন্ঠা দূর হয়ে গেল। দেশ স্বাধীন হয়েছে। শত্রুরা হেরে গেছে। নেমে এল বাধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। শাহিনকে নিয়ে দৌড়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় চলে এল রিফাত। পতাকা নিয়ে মিছিল বের করল। গ্রামের পথে ঘুরে এসেছে বড়দের সাথে। হই হই করল আনন্দে। পতাকা উড়াল বাড়ির সামনে। বাঁশের মাথায়। ছুটে এসে মাকে বলল, এবার বাড়ি চলো। আর কোনো ভয় নাই। ওরা হেরে গেছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। রিফাতের মনে পড়ল সেই ছবির কথা। বঙ্গবন্ধুকে দেখবে সে। এই ছবি অস্থিরতা আরো বড়িয়ে দিল।
বাড়িতে যাওয়া যাবে না। তোর বাবা আসুক। কোথায় তোর দাদু কিছুই জানি না। মা বললেন।
রিফাত অস্থির। আজই সে বাড়িতে যাবে। বলল, দাদুর চিন্তা করো না। কাল শাহিনকে নিয়ে বের হব আমি। দাদুকে খুঁজে নিয়ে আসব। বাবা মনে হচ্ছে অনেক দূরে যুদ্ধে গেছে। আসতে সময় লাগবে। হেঁটেই আসতে হবে। রাস্তাঘাট ভেঙে ফেলেছে ওরা। গাড়ি ঘোড়া নাই।
মা হাসলেন। তুই পারবি না রিফাত। তোর দাদু কোথায় আছেন জানি না। আমরা কয়েকদিন পরে বাড়িতে যাব।
স্বাধীনতা লাভের দিন কুড়ি পরে রিফাতকে নিয়ে বাড়িতে ফিরল মা। দেখল ঘরের অবস্থা এরকম। সেই ছবিটা দেখার জন্য মন আকুবাকু করছে রিফাতের। কোন মানুষটা বঙ্গবন্ধু। কেন সে এতদিন দেখল না। মাকে রেখে ঘরের দিকে হাঁটল রিফাত। ঘরটা একটা ধ্বংসস্তুপ। মালপত্র নিয়ে গেছে। বাকি সব ভেঙে তছনছ করে রেখে গেছে। সেসব ডিঙিয়ে রিফাত সামনের ঘরের উত্তর পাশে গেল। এখানে দাদু থাকত। খাটের উপর ঝুলত সেই ছবিটা। ছবিটা নাই। কোথায় গেল? কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবল। মা এসে পেছনে দাঁড়ালেন। দেখলেন রিফাতের মন খারাপ। কেমন দুঃখ এসে জড়ো হয়েছে ওর মুখে। রিফাত তাকাল মায়ের দিকে। জানতে চাইল সেই ছবিটা কোথায়? দেখছি না যে মা।
কোন ছবির কথা বলছিস?
ওই যে দাদুর সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি।
মায়ের চোখ গেল উপরের চৌকাঠে। ছবিটা এখানেই ঝুলান ছিল। দেখছেন না। খানিক ভেবে বললেন, এখানেই তো ছিল। হয়তো ওরা নিয়ে গেছে।
কারা?
যারা ঘরের এই অবস্থা করেছে।
দাদুর খাটের কাছে গেল রিফাত। তোষক কাথা বালিশ এলোমেলো পড়ে আছে। টেবিলটা উল্টানো। চেয়ারটা কাত হয়ে পড়ে আছে। দাদুর বইগুলো ছড়ানো ছিটানো। সেসবের ভেতর আতিপাতি করে খুঁজল। ছবিটা তার চাই। বঙ্গবন্ধুকে দেখতেই হবে। হঠাৎ চোখ আটকে গেল রিফাতের। দেখল ছবিটা চাপা পড়ে আছে বালিশের নিচে। মাথা নিচু করে তুলল। গ্লাসটা ভেঙে গেছে। চোখের সামনে ধরেই ফিক করে হেসে উঠল। তাকাল মায়ের দিকে। এই তো সেই ছবি। আবার ছবিতে মুখ দিল। দেখল দাদুর পাশের ছবিটা। এই বঙ্গবন্ধু! গভীর দৃষ্টিতে দেখছে। মগ্ন হয়ে। এরপর মাথা তুলল। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ছবি দেখব না। একদিন বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যাব আমি। সামনে দাঁড়িয়ে দেখব। বলব বঙ্গবন্ধু, আমার দাদুর সাথে আপনার ছবি আছে।
২
এক রাতে বাড়ি ফিরল বাবা। যোদ্ধার বেশে। বাবার দাড়ি চুল লম্বা হয়ে ঝুলে পড়েছে। দাদু তখনও ফেরেনি। রিফাত দাদুকে ফিরে পেতে চায়। দাদুর কাছে শুনবে বঙ্গবন্ধুর গল্প। দাদুকে নিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে। কিন্তু দাদু ফেরে না। বাবা বের হলেন দাদুর খোঁজে। বেশিক্ষণ লাগেনি খোঁজ পেতে। বিকেলে ফিরে এসে খবর দিলেন বাবা ফিরবেন না। ওরা মেরে ফেলেছে। লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রিফাত খুব কান্না করল। দাদু আর ফিরবে না। এটা সে মানতে পারছে না। কান্না এক সময় থামল। কিন্তু মন থেকে দাদু আর বঙ্গবন্ধু গেল না। বঙ্গবন্ধুর কাছে সে যাবে। বলবে তার দাদুর কথা। যাকে শত্রুরা মেরে ফেলেছে। এরপর অনেক দিন কেটে গেল। স্কুলে ভর্তি হলো রিফাত। দাদুর কথাও ভুলে গেছে। ভুলে গেছে বঙ্গবন্ধুর কথা। হঠাৎ একদিন শুনল বঙ্গবন্ধু আসবেন তাদের এলাকায়। রিফাতের আবার মনে হলো বঙ্গবন্ধুর কথা। মনে হলো দাদুর কথা। সেই ছবির কথা। বন্ধুদের কাছে গল্প করল। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার দাদুর ছবি আছে। দাদুও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করত। এরপর বলল সে যাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে। ছবিতে নয়, সামনে দাঁড়িয়ে দেখবে। ছবি তুলবে। বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করল। বঙ্গবন্ধুর কীভাবে যাওয়া যায়?
বন্ধুরা অবাক চোখে তাকিয়ে মৃদু হাসল। কী বলে রিফাত। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবে। তাঁর সাথে দেখা করা কী মুখের কথা। তিনি হলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। কত কত পুলিশ থাকেন তার সাথে। গেটেই তো আটকে দেবে।
রিফাতের মাথায়ও এই চিন্তাটা ভর করল। খুব সহজ হবে না দেখা করা। তবু সে যাবে। গেটে আটকে দিলে অন্য ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুর চোখে পড়লে ফিরে আসতে হবে না। দেখা করতে পারবে। তার দাদুর নাম শুনলে ঠিক কাছে টেনে নেবে। আদর করবে।
বন্ধুরা বিশ^াস করল না। তোর দাদুকে বঙ্গবন্ধু চিনতেন?
চিনতেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে দাদুর ছবি আছে। বিশ^াস না হলে আমাদের বাড়িতে চল। দেখাব।
তখন বন্ধুরা কিছু বলল না। দুদিন পরেই বঙ্গবন্ধু এলেন সিলেটে। বিশাল জনসভায় করলেন সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। যুদ্ধ ফেরত হাজার হাজার মানুষ সেখানে হাজির হলো। সবাই দেখতে চায় বঙ্গবন্ধুকে। শুনতে চায় তার কথা। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করলেন। বললেন, তার স্বপ্নের কথা। দীর্ঘদিনের স্বপ্নের ফসল স্বাধীন বাংলার কথা। সেই হাজার হাজার মানুষের জনসভায় দাঁড়িয়ে আছে রিফাত। পাশে বন্ধুরা। দূরে দাঁড়িয়ে ছবির মতো দেখছে বঙ্গবন্ধুকে। মানুষের ভিড় ঠেলে যেতে পারছে না সামনে। সভা শেষে মানুষের ছোটাছুটিতে হারিয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুকে আর দেখতে পারল না। কোথায় গেছেন বঙ্গবন্ধু তা জানে না। মন খারাপ করে বাড়ি ফিরল। দাঁড়াল সেই ছবির সামনে। তখন খুব কান্না পেল। বঙ্গবন্ধুকে এত কাছে পেয়ে সামনে যেতে পারল না। আজ না পারলেও একদিন সে যাবে। বঙ্গবন্ধুর সামনে দাঁড়াবে। রাতে ঘুম নামল না চোখে। হাজারটা প্ল্যান মাথায় কিলবিল করছে। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়া যায়।
পরদিন স্কুলে এল রিফাত। শুনল বঙ্গবন্ধু যাননি। সার্কিট হাউসে আছেন। এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না সে। বন্ধুদের বলল, বঙ্গবন্ধুর কাছে যাব।
বন্ধুরা বলল, পুলিশ আছে। ভেতরে ঢুকতে দেবে না। গেটে আটকে দেবে। অযাথা গিয়ে কী করবি। বড় হয়ে দেখা করতে যাব। রিফাত মানল না। সে যাবে। বলল, তোরা যাবি কিনা সেটা বল।
যাব কীভাবে? স্যার দেখলে পিঠে বেত ভাঙবেন। বলল পায়েল।
স্যার দেখবেন না। আমরা পালিয়ে যাব।
স্যারের চোখ ফাঁকি দেয়া সহজ না। বলল রাশেদ।
দেখ কেমন ফাঁকি দেই। জানালা দিয়ে স্কুলের পেছনে লাফ দিয়ে পড়ল রিফাত। এরপর বন্ধুদের ডাকল। একে একে রিফাতের পথে বেরিয়ে এলো ওরা। হাঁটল সার্কিট হাউসের দিকে। পেছনে বন্ধুরা। একরাশ উত্তেজনা আর স্বপ্ন নিয়ে সার্কিট হাউজের সামনে এল রিফাত। গেটে আটকে দিল পুলিশ। রিফাত বলল, বঙ্গবন্ধুর কাছে যাব। একটা ছবি তুলব।
পুলিশ শুনছে না তার কথা। বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয় যাবে না। বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিল। রিফাতের মন খারাপ হলো। বন্ধুরা হাতাশ। এখান থেকে ফিরে যেতে হবে। স্কুল পালিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পারবে না। এটা হতে পারে না। যাবে তারা বঙ্গবন্ধুর কাছে।
খানিক দাঁড়িয়ে বুদ্ধি করল রিফাত। ফিরে সে যাবে না। বঙ্গবন্ধুর কাছে যাবে। বন্ধুদের বলল, বুদ্ধি একটা বের করতে হবে। কী বুদ্ধি করা যায়।
একটু ভেবে আঙুল তুলে বলল, পেয়েছি বুদ্ধি। দেয়াল টপকে ভেতরে যাব।
তারপর। পুলিশ দেখবে না? বলল রাশেদ।
না দেখবে না। চুপি চুপি দেয়ালের পাশে দিয়ে গেটের কাছে চলে যাবে। যখন কেউ থাকবে না, তখন টুপ করে ঢুকে পরব ভেতরে। চলে যাব বঙ্গবন্ধুর কক্ষে। তারপর কে ফেরায়।
দারুন আইডিয়া। বলল রাশেদ।
পায়েলের ভয় লাগছে। দেয়াল টপকে ভেতরে নামলে পুলিশ টের পাবে। ছুটে এসে ধরবে। তারপর পেটাবে।
ধরা পড়ব না। আয়।
চুপি চুপি দেয়ালের পাশে গেল রিফাত। মাথা তুলে দেখল কেউ নেই। এই সময় দেয়াল টপাকাল। পুলিশ টের পেল না। প্রথমে সার্কিট হাউসের ভেতরে নামল রিফাত। এরপর পায়েল আর রাশেদ। সার্কিট হাউসের ভেতরের গেটে কেউ নেই। ডানে বামে তাকাল না। অমনি ঢুকে পড়ল ভেতরে। কোন রুমে আছেন বঙ্গবন্ধু? জানে না। হাঁটছে বারান্দায়। উঁকি দিচ্ছে কোন রুম খোলা। ভয়ও আছে। কেউ দেখে ফেললে রক্ষা নাই। পাচ্ছে না বঙ্গবন্ধুর খোঁজ। দাঁড়িয়ে বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করল। এরই মধ্যে এক ভদ্র লোক এসে সামনে দাঁড়ালেন। জানতে চাইলেন, তোমরা এখানে কী চাও?
প্রথমে একটু ভয়ে পেয়েছিল রিফাত। কেঁপে উঠেছিল বুক। সামলে নিয়ে সাহস করে বলল, বঙ্গবন্ধুকে দেখতে চাই।
ভদ্রলোক কিছু বলার আগেই কক্ষের ভেতর থেকে ডাক এল, এই ওদের আসতে দেয়। কারা আসছে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে?
এই তো বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ। কাল তার ভাষণ শুনেছে। কে দেখে আনন্দ। মুখে ফুটল হাসি। বঙ্গবন্ধু তাদের ডাকছেন। এবার কে আটকাতে পারবে? বন্ধুদের নিয়ে রিফাত ঢুকে পড়ল সেই কক্ষে। দাঁড়াল বঙ্গবন্ধুর সামনে। কোলবালিশে হেলান দিয়ে পাইপ টানছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার পাশে আরো কয়েকজন বসে আছেন। বঙ্গবন্ধু তাকালেন রিফাতের দিকে। দরাজ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, কে তোরা? কী চাস?
রিফাত বলল , বঙ্গবন্ধুকে দেখতে চাই।
কে বঙ্গবন্ধু?
আপনি।
কে বলছে?
আপনার ছবি আছে আমাদের ঘরে। দাদুর ছবির পাশে।
কে তোর দাদু?
মোকলেজ মাতুব্বর।
বঙ্গবন্ধু উঠে বসলেন। পাইপ রাখলেন। মোকলেজ তোর দাদু। মনটা খারাপ হয়ে গেল বঙ্গবন্ধুর। তিনি শুনেছেন রিফাতের দাদুকে পাকিস্তানী আর্মিরা মেরে ফেলেছে। পাওয়া যায়নি তার লাশ। রিফাতকে কাছে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। আদর করলেন। আবারও জানতে চাইলেন কী জন্য এসেছিস তোরা? গেটে কেউ আটকায়নি?
হ্যাঁ আটকিয়েছিল। দেয়াল টপকে আসছি। আপনাকে দেখার জন্য।
এত কষ্ট করে এসেছিস। দেখ বঙ্গবন্ধুকে। মন ভরে দেখ। দেখা হলো? এবার বল আর কী চাস?
ছবি তুলতে চাই। আপনার সাথে আমার দাদুর ছবি আছে। আমার সাথে নাই।
বঙ্গবন্ধু হাসলেন। ডাকলেন ক্যামেরাম্যান। ওদের সাথে আমার ছবি তুলে দেয়।
ক্যামেরাম্যান ছুটে এল। বঙ্গবন্ধুর সাথে ছবি উঠিয়ে দিল। বঙ্গবন্ধু বললেন, ছবি এখন নিতে পারবি না। ঢাকায় যেতে হবে ছবি আনতে। আমার বাড়িতে যাইস তোরা।
রিফাত বলল, চিনি না আপনার বাড়ি।
চিনতে হবে না। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বলবি। চিনিয়ে দেবে মানুষ। এখন বল আর কী চাস?
অটোগ্রাফ চাই।
সেটা আবার কী জিনিস?
পাশ থেকে একজন বলল, স্বাক্ষর।
আমার স্বাক্ষর দিয়ে তোরা কী করবি?
আপনার কাছে এসেছি সে চিহ্ন রেখে দেব।
তা কোথায় স্বাক্ষর করব? কাগজ পত্র এনেছিস?
সবাই চুপ। কাগজ খাতা কিছু আনেনি। লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইল। বঙ্গবন্ধু কাছে ডাকলেন। এদিকে আয়। কলম বের করলেন। রিফাতের ডান হাতটা ধরে তার ওপর লিখে দিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। যা, দিয়ে দিলাম অটোগ্রাফ। মাথায় হাত দিয়ে আবারও সবাইকে আদর করলেন। বললেন এবার যা। মন দিয়ে লেখাপড়া কর। মানুষ হতে হবে। তোদের একদিন দেশ চালাতে হবে।
রিফাতের আনন্দ দেখে কে। হাসতে হাসতে বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে এল। এবার গেট থেকে বের হলো। পুলিশ অবাক। থামাল। কীভাবে ঢুকলি তোরা?
রিফাত হাতটা বের করে দেখাল। বঙ্গবন্ধুর অটোগ্রাফ। পুলিশ কিছু বলল না। বাইরে বের হয়ে দাঁড়িয়ে রইল রিফতা। বন্ধুরা বলল, এখন দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল। যাবি না?
না। বঙ্গবন্ধু বের হবেন। তাকে আর একবার দেখে যাই। কবে দেখব।
বঙ্গবন্ধু তার বাড়িতে যেতে বললেন। যাবি না?
সে তো অনেক পরের কথা। এখন বঙ্গবন্ধু সামনে আছেন। আর একবার দেখে যাই। খানিক পরেই বঙ্গবন্ধু বের হলেন। ফিরে যাবেন ঢাকায়। সঙ্গে অনেক নেতাকর্মী। হাঁটছেন সার্কিট হাউসের করিডর দিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে দেখে সবাই স্লোগান তুলল। স্লোগান শুনে রিফাত দৌড়ে দেয়ালের উপর উঠে গেল। শুরু করল স্লোগান। তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বন্ধরাও রিফাতের স্লোগান ধরল। রিফাত উচ্চস্বরে স্লোগান দিচ্ছে। ঘেমে ভিজে গেছে। কণ্ঠও ধরে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর চোখ এড়াল না এবারও। দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। সবাইকে থামিয়ে দিলেন। ডাকলেন রিফাতকে। নেমে আয়।
রিফাত এসে সামনে দাঁড়াল। বঙ্গবন্ধু মাথায় হাত দিয়ে আদর করলেন। তুই তো ঘেমে ভিজে গেছিস। এইবার থাম। অনেক স্লোগান দিয়েছিস। ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে বললেন, পড়াশোনা ভালো করে করবে। পড়াশোনায় ভালো চাই। এরপর বঙ্গবন্ধু চলে এলেন ঢাকায়। আনন্দে আত্মহারা হয়ে রিফাত ফিরে গেলে বাড়িতে। সে আজ বঙ্গবন্ধুকে দেখেছে। অটোগ্রাফ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ছবিও তুলেছেন। একদিন ঢাকায় যাবে। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। তখন ছবিটা নিয়ে আসবে।
৩
স্কুলে ফিরে রিফাত সবাইকে জানাল বঙ্গবন্ধুর কাছে গেছিল। বন্ধুরা অবাক। কী বলছিস! বঙ্গবন্ধুর কাছে গেছিলি। বিশ^াস করছে না বন্ধুরা। মুখে বললেই হলো নাকি। বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়া সহজ না। যেতে পারিস না হেডস্যারের রুমে।
মৃদু হেসে রিফাত বলল, তোদের বিশ^াস হচ্ছে না?
না বিশ^াস হচ্ছে না।
হাতটা তুলে ধরল বন্ধুদের সামনে। অবাক চোখে সবাই তাকাল। সত্যি রিফাত বঙ্গবন্ধুর কাছে গেছিল। দেখতে চাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর অটোগ্রাফ। হাতখানা পেতে রাখল রিফাত। বন্ধুরা সবাই মাথা ঝুকে দেখছে। এক বন্ধু হাত বাড়াল। ধরে দেখবে। না না তা হবে না। হাত ধরা যাবে না। দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে পারিস। বঙ্গবন্ধুর অটোগ্রাফ। সাধারণ কথা নয়। মুছে যেতে পারে।
বন্ধুরা আফসোস করছে। আহা তারা যদি বঙ্গবন্ধুর কাছে যেতে পারত। বঙ্গবন্ধু ছোটদের এত ভালোবাসেন। ওদের কাছে নিলেন। আদর করলেন। অটোগ্রাফ দিলেন। ভাবতেই পারছে না।
বঙ্গবন্ধুর দেয়া অটোগ্রাফ নিয়ে মহাআনন্দে বাড়ি ফিরল রিফাত। বাড়ি মাথায় তুলল। হাতটা খুব সাবধানে রাখল। যেন অটোগ্রাফ মুছে না যায়। মা জানতে চাইলেন হাতে কী হয়েছে? এমন লুকিয়ে রাখছিস কেন?
দেখাল বঙ্গবন্ধুর অটোগ্রাফ। রিফাতের হাত দেখছেন না মা। দেখছেন হাতে চাঁদ। তুই বঙ্গবন্ধুর কাছে গেছিলি রিফাত? দেখা পাইলি বঙ্গবন্ধুর?
এই যে অটোগ্রাফ। বিশ^াস হচ্ছে না তোমার?
অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন মা। কথা নাই তার মুখে। রিফাত বঙ্গবন্ধুর কাছে গেছিল। খানিক পরে বললেন, তা বঙ্গবন্ধু কী বললেন?
বললেন লেখাপড়া করিস। দেশ তোদেরই চালাতে হবে।
তোর দাদুর কথা বলছিলি?
হ্যাঁ। শুনে মন খারাপ করলেন বঙ্গবন্ধু। আমি বললাম দাদুর সাথে আপনার ছবি আছে। তারপর আমার সাথে ছবি তুললেন বঙ্গবন্ধু। বললেন, ঢাকায় তার বাড়িতে যেতে।
তাই। বঙ্গবন্ধুর সাথে এত কথা বলেছিস?
হ্যাঁ অনেক কথা হয়েছে।
হাত নিয়ে বসে আছে রিফাত। গোসল করে না। অটোগ্রাফ ধুয়ে যাবে। ভাত খায় না। ধুয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর অটোগ্রাফ। ভাত খাইয়ে দিলেন মা। রাতে গৃহশিক্ষক এলেন। তাকে বলল বঙ্গবন্ধুর কথা। দেখাল অটোগ্রাফ। রিফাতের এত আনন্দের অটোগ্রাফটা পরদিন ধুয়ে গেল। গোসল করতে গিয়ে হাত তুলে রেখেছিল মাথার ওপর। কীভাবে জানি পানি ওখানে পৌছে গেল। খানিক পরে দেখল অটোগ্রাফ নাই। খুব মন খারাপ হলো তখন। চোখে পানি এসে গেল। বারবার দেখছে হাতটা। এই হাতে বঙ্গবন্ধু অটোগ্রাফ দিয়েছেন। রাখতে পারল না সেটা। আবার বঙ্গবন্ধুর কাছে যাবে সে। এবার ডায়েরি নিয়ে যাবে। সেখানে অটোগ্রাফ নিবে। সংরক্ষণ করে রাখবে। সবাইকে দেখাবে এটা বঙ্গবন্ধুর অটোগ্রাফ।
৪
অটোগ্রাফ মুছে যাওয়ায় রিফাতের খুব মন খারাপ হলো। তখন বাবা নিয়ে এলেন মন ভালো করা খবর। পত্রিকায় রিফাতের ছবি ছাপা হয়েছে। যে ছবিতে রিফাতের মাথায় হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। রিফাত হাসল মুখ ভরে। আনন্দ দেখে কে। মুহূর্তের মধ্যে সব দুঃখ ভুলে গেল সে। বাবার কাছে জানতে চাইল পত্রিকা কোথায়? নিয়ে আসনি বাবা।
বাবার তখন মন খারাপ হলো। পত্রিকা পাননি। অনেক চেষ্টা করেছিলেন। ঢাকা গিয়ে পরে সংগ্রহ করবেন। তখন রিফাত চুপ হয়ে গেল। হারিয়ে গেল সব আনন্দ। বঙ্গবন্ধুর সাথে পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হয়েছে। সে দেখতে পারল না। খানিক পরে বাবাকে বলল, থাক। পত্রিকা দরকার হবে না। বঙ্গবন্ধু যেতে বলেছেন তার বাড়িতে। তখন ছবি দিবেন। আমি বলছিলাম আপনার সাথে দাদুর ছবি আছে। আমারও একটা থাকা চাই। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, আমার বাড়িতে আসিস। তোকেও ছবি দেব। ওই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর। ওটাই নাকি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি।
বাবা বললেন ঠিক আছে, একদিন নিয়ে যাব।
তারপর তো অনেক দিন হয়ে গেল। তবু রিফাতের মন থেকে দূর হয়নি বঙ্গবন্ধু। চোখের সামনে ভাসে। মাঝে মাঝেই হাতের দিকে তাকায়। মনে হয় এখনও লেখাটা সে দেখতে পাচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমান। কেমন করে বঙ্গবন্ধু কথা বলছেন। তার সাথে ছবি তুলছেন। বন্ধুদের সাথেও সে গল্প দিচ্ছে দিনের পর দিন। ঢাকা যাবে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। তাও বলছে। রিফাত এখন বন্ধুদের কাছে হিরো। কিন্তু এক সকালে রিফাতের সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেল। বাজার থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িতে এলেন বাবা। ধপাস করে বসে পড়লেন। একটা কথাও বললেন না। বাবার বড্ড মন খারাপ। চোখে জলের ছোঁয়া। কী হলো হঠাৎ। বাড়ির সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। রিফাত এসে বাবার পাশে দাঁড়াল। প্রশ্ন করল না কী হয়েছে? তোমার মন খারাপ কেন? দেখল বাবা ভেঙে পড়ছে। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। কিছুটা স্বাভাবিক হোক। তারপর শুনতে পারবে কী হয়েছে। অনেকক্ষণ লাগল বাবার ভেতর প্রাণ ফেরতে। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললেন সেই খবর। যে খবর শুনে আকাশ ভেঙে পড়ল রিফাতের মাথায়। শব্দ করে কান্না শুরু করল। বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলতে পারে মানুষ? এটা রিফাত বিশ^াস করতে পারছে না। যে একটা দেশ এনে দিল। মানুষকে এত ভালোবাসে। তাকে মানুষ মারবে কেন? কিছুটা শান্ত হয়ে বাবার কাছে এল। সত্যি বঙ্গবন্ধকে মেরে ফেলেছে বাবা?
চোখের জল আড়াল করে বাবা বললেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। সবাইকে মেরে ফেলেছে।
নতুন করে কান্না পেল রিফাতের। বারবার মনে ভেসে উঠল বঙ্গবন্ধুর মুখ। সেই চিত্র দেখছে। তার হাতটা ধরে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। মাথা হাত দিয়ে ছবি তুলছেন। বলছেন পড়াশোনা ভালো করে করিস। তোরাই দেশটা চালাবি। এরপর গিয়ে দাঁড়াল সেই ছবিটার সামনে। একই ফ্রেমে বাধানো তার দুই দাদু। দুই প্রিয় মানুষ। দুজনকেই মেরে ফেলেছে। একজনকে পাকিস্তানিরা। অন্যজনকে বাঙালি। বাঙালির ওপর রিফাতের মনে প্রচন্ড ঘৃণা জমল। ওরা না হয় আমাদের শত্রু ছিল। বাঙালি কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে মারতে পারল? এই প্রশ্নের উত্তর সে কারো কাছে পায়নি।
সেদিনের পর রিফাত আর হাসে না। কথাও তেমন বলে না। বঙ্গবন্ধুর কথা উঠলে সেখানে দাঁড়ায় না। বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলেই তার চোখে জল আসে। মাঝে মাঝে স্কুল থেকে ফিরে ছবিটা সামনে দাঁড়ায়। নিমগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কী দেখে এই ছবিতে কেউ জানে না। বাবা মা দেখেন। কিছু বলেন না। জানেন রিফাতের মনে অনেক কষ্ট।
তারপরও অনেক দিন কেটে গেছে। রিফাত ভাবল একদিন ঢাকায় যাবে। বঙ্গবন্ধু তাকে যেতে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কথা রাখবে সে। বঙ্গবন্ধুর দেখা পাবে না। বাড়িটা দেখে আসবে। ছবিটা হয়তো পাবে না। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করবেন না। বলবেন না ছবি নিতে এসেছিস? তা এত দিন পরে। ওটা দিয়ে কী করবি? আয় নতুন ছবি তুলি। এসব ভেবে বন্ধুদের নিয়ে রিফাত একদিন ধানমিন্ড ৩২ নম্বরে এল। সামনে দাঁড়িয়ে দেখল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। এরপর ঢুকল ভেতরে। ভাবল আজ যদি বঙ্গবন্ধু থাকতেন। কেমন হতো। তাদের পেয়ে আনন্দে হারিয়ে যেতেন। বলতেন তোরা এসেছিস? আজও মনে আছে তোদের সে কথা।
রিফাত ঘুরে ঘুরে দেখছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। এক কক্ষ রেখে আর এক কক্ষে যাচ্ছে। সিঁড়িতে উঁকি দিচ্ছে। দেখছে কোথায় পড়েছিল বঙ্গবন্ধুর লাশ। একটা কক্ষে ঢুকে রিফাতের চোখ আটকে গেল। দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইল দেয়ালে চোখ ঝুলিয়ে। দেখল সেই ছবিটা। বঙ্গবন্ধু তার মাথা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবি দেখে চোখের পানি আটকাতে পারল না রিফাত। জল গড়িয়ে যাচ্ছে তার দু চোখের কোণ দিয়ে। বন্ধুরা অবাক। কী হলো তোর? কেন কাঁদছিস?
রিফাত কিছু বলতে পারছে না। তার মুখে কথা নাই। আঙুল তুলে বন্ধুদের দেখাল সেই ছবি। অবাক চোখে বন্ধুরা তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে। চোখ কেউ সরাতে পারছে না। দেখছে রিফাতের মাথায় বঙ্গবন্ধুর হাত।
0 comments:
Post a Comment