আজ থেকে তুই নিজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর
আখতার হুসেন
কিরে কেমন আছিস
অমন আত্মমগ্ন হেঁটে যাচ্ছিস কোথায়?
পেছন থেকে কে যেনো আলতো
হাত রেখে ঘাড়ে বিঘ্ন ঘটালো যাত্রায়।
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি
সেই বিশাল বৃক্ষ এবং তার গভীর গভীরতর ছায়ার বিস্তার।
আপনি!
অবাক হচ্ছিস কেনো, আমি তোর অনলস অনুগামী
যেখানো তোর পদক্ষেপ, আমারও সেখানেই।
আপনি কি ভ্রমণে বেরিয়েছেন বঙ্গবন্ধু?
বাংরার প্রতি তৃণমূলে আমার পদচ্ছাপ
তবুও আমার পরিব্রাজনের অন্ত নেই। তুই
পথ হারাস কি-না, যাস কি-না ভুল পথে
আমি তাই প্রতিদিন
সঙ্গী হই তোর ছায়ার মতোই।
আপনার মুখ অমন ম্লান কেনো বঙ্গবন্ধু?
দেশের ভবিষ্যৎ ভাবনায়? অন্তর্গত কেনো বেদনায়?
আমার মুখ তো অন্তর্ভেদী এক আয়না। তোরই মুখের
প্রতিটি রেখা তাতে প্রতিবিম্বিত।
এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বলি, সেই কতোদিন পর
আপনার সঙ্গে দেখা। কতোকাল শুনি না
আপনার সেই জলদগম্ভীর স্বরের ভাষণ!
আমি কিন্তু রোজ তোকে দেখি। আর
ভাষণের কথা বলছিস? বলেই তিনি
প্রাণখুলে হো-হো করে একটু হেসে
দীপ্র বলে ওঠেন, ভালো করে কান পাতলেই
বাতাসের অবিরল মর্মর ধ্বনির তরঙ্গে
পাখিদের সরব সেতারের বোলে
বয়ে-চলা নদীর ঢেউয়ের চঞ্চলতায়
সেই যে তোরা বলতিস ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা
তোমার আমার ঠিকানা’, ‘টেকনাফ থেকে
তেঁতুলিয়া’-সর্বত্র, সবখানে, সবকিছুতে
আমার ভাষণের গান।
আপনার কথাগুলো কেমন যেন শোনাচ্ছে বঙ্গবন্ধু!
বেশ রহস্যময়, তাই না? মনে রাখিস,
আমি যেমন তোদের অবিচ্ছেদ্য অতীত,
তেমনি বর্তমান এবং ভবিষ্যতও। দেখে নিস,
আমাকে ছাড়া তোদের কোন কর্মযজ্ঞ
পূর্ণতা পাবে না কোনোদিন। আমার তিল-তিল স্বপ্ন
আর রক্তের ফসল এই বাংলাদেশ।
কিন্তু আপনি জানেন বঙ্গবন্ধু, আপনার নাম
এখনো মুছে ফেলবার
কতো যে নির্লজ্জ প্রয়াস
কতো যে কূটষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র
আর অন্তহীন অপপ্রচারের ডামাডোল।
তোরাও পাগল, ছেলে মানুষের মতো
যেখানে-সেখানে টাঙাতে যাস কেনো
আমার ছবি আর নামের ফলক?
এই যে তুই হাঁটছিস বাংলার বিশাল প্রান্তর জুড়ে
কাজ করছিস কারখানা-কলে
জল-ঝড় আর রোদ-বৃষ্টি সয়ে বীজ বুনছিস ফসলের
নিড়ানি দিচ্ছিস মাঠে মাঠে
গড়ে তুলছিস সবল সেতু, কালভার্ট কি ব্রিজ;
ফল কিংবা শুধুই ছায়ার কাক্সক্ষায়
গাছের চারা লাগাচ্ছিস পথে-প্রান্তরে সুযত্নে, মমতায়,
গড়ে তুলছিস
প্রার্থিত পর্ণকুটীর নিরাশ্রয়ী কারো জন্য
নির্ভরতার নিজস্ব ভিত্তিমুল
ছোট কি বড়ো উজ্জ্বল বিদ্যাপীঠ;
শান্তির নামে আকাশে ওড়াচ্ছিস সফেদ পায়রার ঝাঁক;
রক্তপাতের প্রতিটি উৎস-মুখ বন্ধ করছিস পরম প্রতিজ্ঞায়,
সহস্র শহীদের রক্তের বীজে-বীজে অঙ্কুরিত
আমার বাংলার ভিত্তিতে নিয়ত দিচ্ছিস প্রাণ,
‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তির’ নামে লিখছিস কবিতার পর কবিতা,
দোতারা ও গিটারে কম্প্র আঙুল বুলিয়ে
শিল্পিত গাইছিস জীবন ও জয়ের গান,
প্রিয় কি প্রিয়ার সুকোমল গালের প্রান্তরে
প্রগাঢ় চুমুর আল্পনা
এঁকে দিচ্ছিস সুগভীর আলিঙ্গনে
তাতেই লেখা হয়ে যাচ্ছে আপনা-আপনি আমার নাম,
লোক-দেখানো ছবি আর ফলকে কী এসে যায়?
বাংলার, হে তরুণ পরিব্রাজক,
হে অক্লান্ত কারিগর,
আমি নই
আজ থেকে তুই নিজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর।
0 comments:
Post a Comment