Monday, July 27, 2020

রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা (আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ)









রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ 

অন্ধকারের গহ্বর থেকে তারা বেরিয়ে এলো।
ক্লেদাক্ত অঙ্গে কাপুরুষের কৃষ্ণ খোলস।
দৃষ্টিতে ঘাতক সরীসৃপের বিষধর ফণা।
উদ্ধত আগ্নেয়াস্ত্র মরণ
ছোবলের জন্য উদ্যত। পুণ্য শ্লোকের মতো
স্বাধীনতার বলিষ্ঠ উচ্চারণকে তারা নীরব ক‘রে দেবে।
শালপ্রাংশু বৃক্ষের গুঁড়ির মতো দীর্ঘদেহ। পরনে
শে^ত কপোতের পাখার মতো শুচিশুভ্র পাঞ্জাবী।
করতলে পলিমাটির সুগন্ধ। চোখের তারায়
প্রথম সূর্য্যরে অনুচ্চার আভা।
রাত্রিশেষ এবং ঊষালগ্নের অন্তবর্তীঅলিন্দে
তিনি এসে দাঁড়ালেন । ডান হাতের তর্জনী
এবং মাধ্যমা আকাশপানে উর্ধমুখী। আরেক
হাতে বনতুলসীর আশীর্বাণী। হৃদয়ে সকল
মানুষের জন্য মঙ্গল বারতা। কণ্ঠে ভালোবাসার উচ্চারণ।
সাহস বুকের মাঝখানে রক্ত
শে^ত কপোতের পাখায় রক্ত
বনতুলসীর চিরলপাতায়
দিগন্তের নীলিমায়
মারলীর শুভ্র গ্রীবায়
লাল পলাশের নির্ঝর।
বিশ^স্ত ভালোবাসার প্রতি সামান্য
অমনোযোগের ফলে অযুত কন্ঠের মুক্তির গান
নিঃশব্দ হ’লো। তারপর দেড় যুগ ধরে
সমরতন্ত্রের নিষ্পেষণ, গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে
একনায়কত্বের দাম্ভিক পদচারণ।
কিন্তু কোটি মানুষের হৃদয়ে অশ্রুত
শঙ্খধ্বনির মতো মুক্তির মন্ত্রোচ্চারণ কখনো
নিঃশব্দ হয় না, হতে পারে না।
বলদর্পী স্বেচ্ছাচার তাদেরকে বারবার চোখ
বেঁধে বধ্যভূমিতে উপনীত করেছে, কিন্তু
তারা প্রাচীন সংগীতের মতো ঋজু এবং সংহত
হ’য়েছে। পর্বতশৃঙ্গের মতো মহাকাশকে স্পর্শ
করেছে। দিকচক্রবাগের মতো দীর্ঘ থেকে
দীর্ঘতর হয়েছে এবং হিংস্র ঘাতক তাদের
কাছে নতজানু হ’য়ে ক্ষমা ভিক্ষা ক’রেছে।
আবার তারা শুনতে পেলো কে যেন কাছে
ডাকছে, ভালোবাসা যেমন নিঃশব্দ মর্মরে
হৃদয়ের কাছে ডাকে । বহু হৃদয়ের জমাট
বাঁধা অশ্রু ধুইয়ে দিল পিতার দেহ। মানুষ,
তরুলতা, পায়রা, ঘুঘু, কাজলি, চাপিলা,
মুনিয়া পাখি, বনতুলসী সকলেই কান পেতে
আছে। তিনি কথা ব’লছেন :
‘ভালোবাসার পথ ঋজু এবং বন্ধুর
তোমরা তাকে অনুসরণ কর।
ভালোবাসা যখন কথা বলে
তোমরা গভীর বিশ^াসে শ্রবণ ক’রবে,
যদিয়ো ভালবাসার স্বপ্নের মতো উচ্চারণ
স্বপ্নকে বিদীর্ণ করে
যেমন কালবোশেখি গোলাপের বাগানকে।
ভালোবাসা তোমাদের মুক্তির মুকুট পরাবে
ভালোবাসা তোামাকে ক্রুশবিদ্ধ ক’রবে,
তোমাদের পাখ-পাখালিতে
রোদ্রের মতো চমকাবে
আবার শেকড়ের গভীরে নেমে গিয়ে
ভীষণভাবে নাড়া দেবে।
যখন তোমরা ভালোবাসার কাছে সমর্পিত
তখন হৃদয়ের গোপন সংবাদ জানতে পারবে
এবং জীবনের হৃদয়কে অন্তরে ধারণ  ক’রবে।
তখন তোমরা ঘুম ভাঙলে বলবে
আরেকটি ভালোবাসার দিন পেলাম
এবং সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে গেলে
তোমাদের বুকে থাকবে
ভালোবাসার জন্য প্রার্থনা ঠোঁটে থাকবে ভালবাসার গান।
ভালোবাসার পথ ঋজু এবং বন্ধুর।’
জোনাকি এবং শিশিরের অন্তর্বর্তী সেই
রক্তাপ্লুত লগ্নটি প্রতিবছর ফিরে আসে।
বাংলার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়
প্রতিরোধের উচ্চারণ। তখন আমাদের সহস্র
অযুত-কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বিষসর্প
কাপুরুষদের চির প্রয়াণের সঙ্কল্প, সুতীব্র
ঘৃণার চুড়ান্ত অবসানের অঙ্গীকার, দ্বন্দ্ব এবং
বিরোধের পরিসমাপ্তির প্রতিশ্রুতি।
সুপুরুষ ভালোবাসার সুকণ্ঠ সংগীত কবিতা
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।

0 comments:

Post a Comment